বিফ রেজালা সহজ রেসিপি |বিফ রেজালা রান্নার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে বিফ রেজালা একটি অন্যতম জনপ্রিয় পদ। মসলার নিখুঁত সংমিশ্রণ, খাসির মাংসের বদলে গরুর মাংস এবং ঘন দুধের ব্যবহারে তৈরি এই রেসিপি দারুণ সুস্বাদু ও মনোমুগ্ধকর। বিফ রেজালার খাঁটি স্বাদ পাওয়া সহজ নয়, তবে সঠিক উপায়ে রান্না করলে আপনি বাড়িতেই এটি তৈরি করতে পারেন। আজকের ব্লগে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে সহজে বিফ রেজালা রান্না করা যায়, সেই সাথে কিছু টিপসও জানানো হবে, যা আপনার রান্নাকে আরো সুস্বাদু এবং নিখুঁত করে তুলবে।
বিফ রেজালার পরিচিতি
বিফ রেজালা মূলত মুঘলদের আমলের রান্না হিসেবে পরিচিত, যা আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার খাবারের ঐতিহ্যের একটি অংশ। সাধারণত, রেজালা খাসির মাংস দিয়ে তৈরি করা হলেও, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গরুর মাংস দিয়েও এটি বেশ জনপ্রিয়। এই খাবারটি দই, কাজু, পেঁয়াজ, এবং বিভিন্ন মসলার মিশ্রণে তৈরি একটি খাসা পদ। বিফ রেজালার রঙ সাদা-হালকা সোনালি হয়, এবং এর স্বাদ মশলাদার হলেও মাখন মতোন মোলায়েম।
বিফ রেজালা রান্নার প্রধান উপাদানসমূহ:
১. গরুর মাংস: ১ কেজি (ছোট ছোট টুকরা করে কাটা)
২. পেঁয়াজ: ২ টো (বড় আকারের, পাতলা কুঁচি করা)
৩. দই: ১/২ কাপ
৪. কাজু পেস্ট: ২ টেবিল চামচ
৫. রসুন পেস্ট: ১ টেবিল চামচ
৬. আদা পেস্ট: ১ টেবিল চামচ
৭. গরম মশলা গুঁড়া: ১ চা চামচ
৮. এলাচ: ৪-৫ টি
৯. দারচিনি: ২ টুকরা
১০. লবঙ্গ: ৪-৫ টি
১১. তেজপাতা: ২ টি
১২. লবণ: স্বাদ অনুযায়ী
১৩. চিনি: ১/২ চা চামচ
১৪. সাদা মরিচ গুঁড়ো: ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক)
১৫. ঘি: ২ টেবিল চামচ
১৬. তেল: ২ টেবিল চামচ
১৭. দুধ: ১/২ কাপ (ঐচ্ছিক)
১৮. পানি: প্রয়োজনমতো
বিফ রেজালা রান্নার ধাপ:
১. গরুর মাংস প্রস্তুতি:
প্রথমে গরুর মাংস ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। মাংসের অতিরিক্ত চর্বি কেটে ফেলুন। এবার একটি বড় বাটিতে মাংস নিন, তার মধ্যে দই, আদা পেস্ট, রসুন পেস্ট, লবণ, এবং সাদা মরিচ (যদি ব্যবহার করেন) মিশিয়ে মেরিনেট করে রাখুন। অন্তত ১ ঘন্টা এই মিশ্রণে মাংস রেখে দিন, যাতে মাংসের ভেতরে মশলার স্বাদ ভালোভাবে প্রবেশ করে।
২. পেঁয়াজ ভাজা:
একটি বড় কড়াইতে তেল গরম করে নিন। তেল গরম হলে এর মধ্যে পেঁয়াজ কুঁচি দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজুন। পেঁয়াজ সোনালি বাদামী রঙ ধারণ করলে তা তুলে রাখুন। কিছুটা পেঁয়াজ পরে গার্নিশ করার জন্য রেখে দিতে পারেন। ভাজা পেঁয়াজ পরে মাংসে মিশিয়ে দিলে মাংসের স্বাদ অনেক মাখনমতো মোলায়েম হবে।
৩. মশলা ভাজা:
কড়াইতে ঘি গরম করুন। এবার এর মধ্যে এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, এবং তেজপাতা দিন। মশলার গন্ধ বের হওয়া পর্যন্ত এগুলো ভাজতে থাকুন। মশলার গন্ধ নাকের মধ্যে প্রবেশ করলে বুঝবেন এগুলো ঠিকমতো ভাজা হয়েছে।
৪. মাংস রান্না করা:
মশলা ভাজার পর মেরিনেট করা গরুর মাংস কড়াইতে ঢেলে দিন। মাঝারি আঁচে মাংস ভালোভাবে নাড়াচাড়া করতে থাকুন। ৫-৭ মিনিট নাড়াচাড়া করার পর মাংসের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করবে এবং মশলার ঘ্রাণ বের হবে। এবার এর মধ্যে কাজু পেস্ট ও ভাজা পেঁয়াজ দিয়ে দিন। মাংসের সাথে সব উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিন এবং কিছুক্ষণ ঢেকে রান্না করুন।
৫. দুধ যোগ করা (ঐচ্ছিক):
যদি আপনি বিফ রেজালার স্বাদ আরও মোলায়েম করতে চান, তাহলে এই সময় দুধ যোগ করতে পারেন। দুধ মিশিয়ে দিলে রেজালার ঘনত্ব বাড়বে এবং রঙ আরও সুন্দর হবে। দুধ মিশিয়ে ৫-৭ মিনিট অল্প আঁচে রান্না করুন।
৬. চূড়ান্ত ধাপ:
মাংস নরম হয়ে এলে এর মধ্যে চিনি ও গরম মশলা গুঁড়া যোগ করুন। ভালোভাবে নেড়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন এবং ১০-১৫ মিনিট অল্প আঁচে রান্না করুন। মাংস সম্পূর্ণ সিদ্ধ হয়ে গেলে এবং রেজালার তেল উপরে ভেসে উঠলে আপনার রান্না শেষ। মশলার ঘনত্ব ও স্বাদ পরীক্ষা করে লবণ ঠিক আছে কিনা দেখে নিন।
বিফ রেজালা পরিবেশন:
বিফ রেজালা সাধারণত গরম গরম পরিবেশন করা হয়। নান, রুটি, পরোটা বা পোলাওয়ের সাথে এটি পরিবেশন করলে সবচেয়ে ভালো লাগে। পরিবেশনের আগে উপরে কিছু ভাজা পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ ছড়িয়ে দিন, এতে দেখতে যেমন ভালো লাগবে তেমন খেতেও দারুণ হবে।
বিফ রেজালা রান্নার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
১. মেরিনেশনের সময়: মাংস যত ভালোভাবে মেরিনেট হবে, রান্নার স্বাদ ততই ভালো হবে। ১ ঘন্টা না পারলে অন্তত ৩০ মিনিট মেরিনেট করে রাখুন। মেরিনেশনের সময়টা বাড়াতে পারলে স্বাদও বাড়বে।
২. মাংসের টুকরো ছোট রাখা: বিফ রেজালা তৈরির জন্য গরুর মাংস ছোট টুকরো করে কাটা উত্তম। বড় টুকরো হলে মাংস সিদ্ধ হতে বেশি সময় লাগতে পারে এবং মশলা পুরোপুরি ঢোকাতে কষ্ট হয়।
৩. ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ: রেজালার ঝোল সাধারণত ঘন হয়, কিন্তু আপনি নিজের ইচ্ছেমতো ঝোল পাতলা বা ঘন রাখতে পারেন। যদি ঘন ঝোল চান, তবে দুধ এবং কাজু পেস্ট ব্যবহার করুন, এবং জল কম দিন।
৪. মশলা সতেজ রাখুন: গরম মশলা ব্যবহারের আগে তা সামান্য ভেজে নিলে মশলার স্বাদ বাড়ে এবং রান্নায় আরও ভালো ঘ্রাণ আসে।
৫. দই ভালোভাবে ফেটান: দই যদি ভালোভাবে ফেটানো না হয়, তাহলে রান্নায় তিতা স্বাদ আসতে পারে। তাই দই রান্নায় দেওয়ার আগে একবার ফেটিয়ে নিন।
বিফ রেজালার পুষ্টিগুণ:
বিফ রেজালা উচ্চ প্রোটিনযুক্ত একটি খাবার। গরুর মাংসে প্রোটিন, আয়রন, এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান পাওয়া যায়, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে এটি ক্যালোরি সমৃদ্ধ, তাই যারা ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণে রাখেন, তাদের জন্য এই খাবারটি মাঝেমধ্যে উপভোগ করা ভালো।
বিফ রেজালা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার, যা বিশেষ করে উৎসব এবং পারিবারিক অনুষ্ঠানে জনপ্রিয়। এই রেসিপিটি যদি আপনি ঠিকমতো অনুসরণ করেন, তবে বাড়িতে বসেই রেস্টুরেন্টের স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন